রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের প্রতারণার থাবা থেকে রেহাই পাননি দরিদ্র রিকশাচালকরাও। রিকশার জন্য ভুয়া লাইসেন্সের ব্যবসা খুলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এই ভুয়া লাইসেন্সের জন্য রিকশাপ্রতি এককালীন দুই হাজার টাকা হাতিয়ে নিতেন তিনি। এ ছাড়া রিকশাপ্রতি মাসে লাইসেন্সের জন্য তাকে দিতে হতো আরও ৫০০ টাকা করে। হাজার হাজার রিকশাচালকের কাছ থেকে এভাবে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারক সাহেদ। সাহেদের অফিস থেকে এমন অসংখ্য ভুয়া লাইসেন্স জব্দের তদন্ত করতে গিয়ে র্যাব এসব তথ্য জানতে পেরেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তদন্তসংশ্লিষ্টরা সাহেদের কর্মকা- জেনে অবাক হচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন খাতে বিভিন্ন উপায়ে প্রতারণার জাল বিছিয়ে রেখেছিলেন। যেখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ধরা পড়ত নানাভাবে। বিনিময়ে সাহেদ হাতিয়ে নিতেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। তারই একটি হলো ভুয়া লাইসেন্স। উত্তরা এলাকায় রিকশার ভুয়া লাইসেন্স দেওয়ার এ ব্যবসা খুলে বসেন সাহেদ।
তার এই অপকর্মের টার্গেটে পরিণত হন দরিদ্র রিকশাচালকরা। তুরাগ থানার হরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের নামে বানানো হয় অনেক ভুয়া লাইসেন্স। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরীর আওতাধীন উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় এই ভুয়া লাইসেন্সের ব্যবসা ছিল সাহেদের। তার প্রধান কার্যালয় থেকে সহস্রাধিক ভুয়া সনদ জব্দ করা হয়েছে। জব্দ করা এসব লাইসেন্সে সংশ্লিষ্ট সবার সিল স্বাক্ষরও রয়েছে।
এদিকে ঘটনার ছয় দিন পার হলেও গতকাল পর্যন্ত সাহেদকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তাকে গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েও কিনারা করতে পারছে না।
অন্যদিকে সাহেদের নামে এখন পর্যন্ত ৫৬টি মামলার সন্ধান মিলেছে। অনুসন্ধান চালালে তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। হত্যা, অপহরণ, ব্যাংকঋণ জালিয়াতি, হুমকি, প্রতারণা, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে এসব মামলা করা হয়। একজন মানুষের নামে এতগুলো মামলা থাকার পরও তিনি কীভাবে দিব্যি স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলেন সেই প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। কাদের প্রশ্রয়ে এসব মামলার হাত থেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন সেই প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম আমাদের সময়কে বলেন, ‘সাহেদের বিষয়ে প্রতিদিনই অনুসন্ধানে নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাজধানীর উত্তরার কোভিড ডেডিকেটেড রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালান র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযান পরিচালনাকালে উঠে আসে রিজেন্ট হাসপাতালের অনিয়মের ভয়াবহ সব তথ্য। পরীক্ষা না করেই দেওয়া হতো করোনা পজিটিভ/নেগেটিভ রিপোর্ট। পরে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুরের শাখা দুটি সিলগালা করে দেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। আর করোনা চিকিৎসার নামে প্রতারণাসহ নানা অভিযোগে সাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করে র্যাব। এ ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও সাহেদ পলাতক রয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন রিমান্ডে রয়েছেন।
Leave a Reply